প্রত্যয় কৃষি ডেস্ক:কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার কামারখোলা গ্রামের কৃষি ফসলি জমিতে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে গ্রামীণ নারীরা।এই সব নারীদের সিংহভাগ স্বামী পরিত্যাক্তা, গরিব , অসহায় ও বিধবা। কৃষি জমিতে নারীদের এমন অংশগ্রহন স্বাধীনতার প্রথম ১০/১২ বছর ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার ও ধর্মীয় রক্তচোক্ষ।বর্তমানে কামারখোলা গ্রামসহ আশেপাশের কৃষিকাজে গ্রামীণ নারী শ্রমিক দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। নারী পুরুষ একত্রে মিলেমিশে সুখ-দু:খের ভাগীদার হয়ে তাদের জীবন জীবিকা চলে।গ্রামীণ নারীর অবদান অসীম, যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।গ্রামীণ নারীর রাজনৈতিক ও আর্থ্ সামাজিক ক্ষমতায়নে এবং সকল পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনে তাদের পূর্ণ ও সমান অংশ গ্রহনকে সমর্থন করতে হবে ,সবাই কে।গ্রামীণ নারী ও মেয়েদের সকল মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা সহ তাদের অধিকার লঙ্গন না হয় এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পারিবারিক যৌণ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।কৃষিতে নারীর অংশগ্রহন গত দুই দশকে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।এই খাতে নারীরা অংশগ্রহন করে দেশের মূল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের এই খাতের কাজের স্বীকৃতি মিলেনি আজও।কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন , পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে মানুষের মানুষিকতার পরিবর্তন হয়নি আজও, পিছিয়ে রয়েছে বিশাল এই গ্রামীণ নারী গোষ্ঠী।নিজেদের অধিকার আদায়ে নারীদেরও আরো সচেষ্ট হতে হবে।
তৈরি পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের শতকরা ৮৫ ভাগ ই নারী শ্রমিক।পোশাক শিল্পের নারীদের অংশগ্রহন প্রায় সবখানে স্বীকৃত তবে একেবারে উল্টোচিত্র গ্রামীণ নারীদের বেলায় যারা কৃষিকাজে নিয়োজিত।কামারখোলা গ্রামের মৃত ফজর আলী মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা জেসমিন আক্তার তাদের একজন। পুরুষের সমান পরিশ্রম করে কৃষিনারীর স্বীকৃতি যেমন নেই, নেই তাদের পুরুষের সমান মজুরি। জেসমিন আক্তার বলেন ”পুরুষের তোলনায় নারী কৃষি শ্রমিক কৃষিতে বেশি সময় দেয় ও কাজ করে বেশি.তবে মজুরির বেলায় দৈনিক হাজিরাতে পুরুষ পায় ৫০০ টাকা করে আর আমরা নারী বলে পাই ৩৫০ টাকা করে “ এযেন এক বেতন বৈষম্যের আলোছায়ার গল্প।মজুরি বৈষম্যসহ কৃষিকাজে নারীর স্বীকৃতি না পেলেও গেল দুই দশকে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহন বেড়েছে দ্বিগুণ হারে।কৃষিতে সরাসরি যুক্ত শতকরা ৫৯ ভাগ নারী, আর মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৯ ভাগ নারী কোন না কোন ভাবে কৃষিতে জড়িত।এছাড়া পারিবারিক আর্থিক সমতা বাড়াতে গ্রামীণ নারীরা প্রতিদিনের মোট কাজের প্রায় ৫৩ ভাগ সময় ব্যয় করেন কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতে।যেখানে এই খাতে পুরুষেরা সময় ব্যয় করেন নারীর চেয়ে কম ৪৭ ভাগ।৭০ ভাগ নারী সরাসরি যুক্ত বাড়ির আঙ্গিনায় ফল বা শাকসবজি উৎপাদনে এবং গৃহপালিত প্রাণি লালন-পালনে পারিবারিক পুষ্ঠি চাহিদা মেটাতে অবদান রাখছে দেশের ৪০ ভাগ নারীরা (সূত্র: মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন) , তবে দেশের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা নারীদের এই অবদানকে স্বীকৃতি দেয়না আজও।স্বাধীনতার পর থেকেই নারীদের ক্ষমতায়ন ও যে কোন সংকট উত্তরনে বাংলাদেশের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার ”একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ”মাধ্যমে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহনকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে।গ্রামীণ নারী শ্রমিক কৃষিতে যে সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন, তা হলো মজুরি বৈষম্য, কৃষি মাঠে/জলায় নারী বান্ধব ওয়াস রুমের অভাব, সুপেয় পানির অভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।প্রকৃতভাবে গ্রামীণ নারীরা কৃষিতে সংকট কাটিয়ে স্বীকৃতি পায়নি আজও।সামগ্রিক অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে নারীর অবদানকে আরো বাড়াতে হবে, কেননা কবি বলেছেন, ”পৃথিবীতে যা কিছু মহান ও চির কল্যাণ কর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
লেখক: মো:খোরশেদ আলম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যলিয়,রংপুর ও প্রাক্তন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,সাভার,ঢাকা।
রিপোর্ট:খুরশেদ আলম